পর্ব-১ ভাইবা প্রস্তুতি বিষয়: জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাস ( প্রাণিবিদ্যা)
জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাস
জীব বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন সময় জীবকে শ্রেণীবদ্ধকরণের চেষ্টা করেছেন। সর্বাধুনিক পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন ১৯৭৮ সালে বিজ্ঞানী মারগিউলিস (Margulis) ও হুইটেকার ( Whittaker) । তিনি সমস্ত জীবজগতে দুটি সুপার কিংডমের আওতাভুক্ত করেন। এ দুটি সুপার কিংডমের আওতায় জীবজগৎকে মোট ৫ টি রাজ্যে ভাগ করা হয়েছে।
সুপার কিংডম- ১: প্রোক্যারিওটা ( Prokaryotae ) : এরা আদিকোষ ( নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়) বিশিষ্ট এককোষী, আণুবীক্ষণিক জীব।
সুপার কিংডম- ২: ইউক্যারিওটা ( Eukaryotae) : এরা প্রকৃতকোষ ( নিউক্লিয়াস সুগঠিত ) বিশিষ্ট এককোষী বা বহুকোষী জীব। এরা এককভাবে বা কোলনি আকারে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে।
আর রাজ্য গুলো হলো ১। মনেরা ২। প্রোটিস্টা ৩। ফানজাই ৪। প্লান্টি ৫। এনিমেলিয়া
রাজ্য-১: মনেরা: এ রাজ্যের অধীনে জীবের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
ক) জীবটি এককোষী এবং এর কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না।কোষে ক্রমাটিন বস্তু থাকে কিন্তু নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা নেই।
খ) এরা খুবই ক্ষুদ্র এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা যায় না। এদের কোষে প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি নেই কিন্তু রাইবোজোম থাকে।
উদাহরণ: ব্যাকটেরিয়া, Nostoc ( নীলাভ সবুজ শৈবাল), রাইজোবিয়াম।
রাজ্য-২: প্রোটিস্টা: এর অধীনে ঐ সকল জীবকে বিন্যস্ত করা হয়, যাদের কোষ সুগঠিত নিউক্লিয়াসযুক্ত। ক্রোমাটিন বস্তুতে DNA, RNA ও প্রোটিন থাকে।কোষে সকল ধরনের অঙ্গাণু থাকে। এরা এককোষী, একক বা দলবদ্ধভাবে থাকতে পারে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন জনন ঘটে। কনজুগেশনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে। কনজুগেশন হলো জৈবনিকভাবে ভিন্ন তবে গঠনগতভাবে এক এরূপ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন পদ্ধতি।
উদহরণ: ইউগ্লেনা, অ্যামিবা, প্যারামেশিয়াম, এককোষী ও বহুকোষী শৈবাল ইত্যাদি।
রাজ্য-৩: ফানজাই বা ছত্রাক: এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। এরা সাধারণত এককোষী বা বহুকোষী হয়। দেহে ক্লোরোফিল নেই, তাই এরা পরভোজী । কোষ প্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত।
উদাহরণ- ইস্ট, পেনিসিলিয়াম ( Penicillium), মাশরুম ইত্যাদি।
রাজ্য-৪: প্লান্টি ( উদ্ভিদ জগৎ): এরা সাধারণত নিজেরা খাদ্য প্রস্তত করতে পারে তাই এরা স্বভোজী। এরা এক বা বহুকোষী হতে পারে। কোষপ্রাচীর সেলুলোজ দ্বারা নির্মিত। এদের কোষ সুগঠিত নিউক্লিয়াসযুক্ত। উদ্ভিদে সবুজ কণিকা বা ক্লোরোফিল থাকে, তাই এগুলো খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে। প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোকসংশ্লেষনকারী উদ্ভিদ । এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান।
উদাহরণ: ফার্ণ,আম, জাম ইত্যাদি।
রাজ্য-৫: Animalia (প্রাণিজগৎ): এরা নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বহুকোষী প্রাণী।এসব জীবের কোষে সেলূলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে না। সাধারণত এ কোষগুলোতে প্লাস্টিডও থাকে না। তাই খাদ্যের জন্য এরা উদ্ভিদের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। প্রধানত যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। পরিণত ডিপ্লয়েড পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীর জননাঙ্গ থেকে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেড উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: মাছ, পাখি, গরু, মানুষ ইত্যাদি।
অপুষ্পক উদ্ভিদ: এসব উদ্ভিদের ফুল হয় না। এরা রেণু বা স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে। এদের অনেকের দেহকে মূল, কান্ড ও পাতায় বিভক্ত করা যায় না। এরা সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ।
যথা: স্পাইরোগাইরা।
আবার কিছু উদ্ভিদের কান্ড ও পাতা রয়েছে তবে মূল নেই । মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড রয়েছে। এরা সবুজ ও স্বভোজী। এদের স্যাতস্যাতে ইট, মাটি, দেয়াল ও গাছের বাকলে জন্মাতে দেখা যায়। এছাড়া পানিতে ভাসমান অবস্থায়ও এদের দেখা যায়। সাধারণত এরা পুরাতন ভেজা দেয়ালে কার্পেটের মতো নরম আস্তরন করে ঠাসাঠাসিভাবে জন্মে। যেমন মস।
ফার্ণ অপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যে সর্বপেক্ষা উন্নত। ফার্ণের দেহ মূল, কান্ড ও পাতায় বিভক্ত। বাড়ির পাশে স্যাঁতস্যাতে ছায়াযুক্ত স্থানে এবং পুরানো দালানের প্রাচীরে এরা প্রচুর পরিমাণে জন্মে। যেমন- ঢ়েঁকিশাক।
No comments