প্রশ্ন: দুটি প্রজাতির মধ্যে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক আন্ত:ক্রিয়া উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
প্রশ্ন: দুটি প্রজাতির মধ্যে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক আন্ত:ক্রিয়া উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
অথবা প্রাণীর পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা পপুলেশনে বিভিন্ন প্রকার অন্ত:প্রজাতিক এবং আন্ত: প্রজাতিক প্রতিক্রিয়া বর্ণনা কর।
উত্তর: গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য জীব এক অপরের দ্বারা প্রভাবিত এবং কমবেশি নির্ভরশীল।পারস্পারিক সংযোগ ও নির্ভরশীলতাই জীবক্রিয়া পরিচালনার চাবিকাঠি।কাজেই জীবজগতে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কগুলোকে সহাবস্থান নামে আখ্যায়িত করা যায়।এই সহাবস্থানকারী জীবের মধ্যে যে ক্রিয়া- বিক্রিয়া ঘটে তাকে মিথস্ক্রিয়া বলা হয়। উপরের আলোচনা থেকে এটিও পরিষ্কার হয়েছে যে মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী জীবগুলো পরস্পর আন্তঃনির্ভরশীল, কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানী ওডাম (Odum) বলেন যে, আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক দুইভাবে হতে পারে, যেমন
(a) ধনাত্মক (+) আন্তঃক্রিয়া (Positive interactions) দ্বারা
(b) ঋনাত্মক (-) আন্তঃক্রিয়া (negative interactions) দ্বারা।
a) ধনাত্মক (+) আন্তঃক্রিয়া (Positive interactions) :
১. নিরপেক্ষ সম্পর্ক (Neutralism) : দুটি ভিন্ন প্রজাতি একই বাসস্থানে থাকলেও একে অপরের মধ্যে কোন উপকার বা অপকার দেখা যায় না। এক্ষেত্রে দুটি প্রজাতির কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
২. পারস্পারিক জীবীতা (Mutualism): এক ধরনের ধনাত্মক সম্পর্ক। এক্ষেত্রে উভয় প্রজাতি এক অপরের দ্বারা উপকৃত হয়।পূর্বে এ সম্পর্ককে মিথোজীবিতা (Symbiosis) বলে অভিহিত করা হত। উদাহরণসরূপ সবুজ শৈবাল ( Zoochlorella) ও Chlorohydra viridisima -র মধ্যে স্থাপিত সম্পর্ক ।
৩. সহ-অবস্থানগত সম্পর্ক (Commensalism): এখানে দুটি প্রাণী একে অপরের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করে এবং কমপক্ষে একটি প্রজাতি অপর প্রজাতির নিকট থেকে উপকৃত হয় তবে অন্য প্রজাতির কোন উপকার বা কোন ক্ষতি হয় না। যেমন- তিমির পিঠে বারনাকল হাঙ্গরের পেটের নিচে Remora মাছ তার চোষক দ্বারা সংযুক্ত অবস্থায় জীবনযাপন করে। শেষোক্ত ক্ষেত্রে হাঙ্গর যখন খাদ্য খায় তথন পিছনের দিকে সরে যাওয়া ছিন্ন ভিন্ন বা উচ্ছিষ্ট অংশ Remora মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বেশ কিছু Protozoa, Escherichia coli ব্যাক্টেরিয়া মানুষের অন্ত্রে থেকে অভ্যন্তরীণ সহাবস্থানগত সম্পর্ক স্থাপন করে। এখানে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না।কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার জীবনধারণ স্বাভাবিক থাকে অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া উপকৃত হয়।
৪. প্রটোকপারেশন (Protocooperation) : যখন দুটি ভিন্ন প্রজাতির জীব একসাথে থেকে উভয়ই উপকৃত হয় । তবে এরুপ সম্পর্ক নিবিড় নাও হতে পারে অর্থাৎ বাধ্যতামূলক নয়। উদাহরণসরুপ পশ্চিম ফ্লোরিডার উপকূলের নিকটবর্তী দ্বীপে এক ধরনের গাছের নিচু ডালে বক ( Heron) বাসা বেধে ডিম পাড়ে। ঐ সময় গাছের গোড়ায় সাপ এসে জড়ো হয়। কারণ বক মাছ খাওয়ার সময় যে দু-চারটি মাছ গোড়ার চারপাশের মাটিতে পড়ে থাকে তা সাপ ভক্ষণ করে। অন্যদিকে শিকারী অন্য কোন প্রানী সাপের কারণে গাছে আহরণ করতে না পারায় বকের ডিম ও বাচ্চা রক্ষা পায়। এরুপ বক ও সাপের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে এক ধরনের Protocooperation । আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে- Crocodile bird কুমিরের দাতের ফাকে আটকানো জোক তুলে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এতে কুমীর পাখির কোন ক্ষতি করে না। কুমীরও জোক মুক্ত হয়। ফলে উভয়ই উপকৃত হয়।
(b) ঋনাত্মক আন্তঃক্রিয়া (-) (negative interactions):
১. পরজীবিতা (Parasitism) : ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এক ধরনের ঋনাত্মক সম্পর্ক । এখানে প্রজাতি উপকৃত হয় আর অপরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সম্পর্ক মূলত খাদ্য সংগ্রহ, আশ্রয় ও আত্মরক্ষামূলক হয়। কখনো কখনো কোন পরজীবী রোগ সৃষ্টি করে, তখন তাকে Pathogenic parasite বলে। যেমন- মানুষের বৃহদান্ত্রে বসবাসকারী আমশয় রোগের জীবাণু Entamoeba histolytica.
২. শিকারজনিত সম্পর্ক (Predation) : এক ধরনের ঋনাত্মক সম্পর্ক। যখন একটি প্রজাতি অপর কোন প্রজাতির উপর আক্রমণপূর্বক প্রথমে মেরে ফেলে এবং পরে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। যে শিকার করে তাকে শিকারি প্রাণী ( Predator) বলে। শিকার দুই প্রকার, যথা- তৃণভোজীকে মাংসাশী প্রাণী দ্বারা শিকার, যেমন- বাঘ কর্তৃক হরিণ শিকার এবং স্বগোত্রীয় শিকার ( Cannibalism) অর্থাৎ একই প্রজাতির সদস্য দ্বারা অন্য সদস্য শিকার।
৩. অবদমনমূলক সম্পর্ক ( Amensalism) : এক ধরনের ঋনাত্মক সম্পর্ক। দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এক অন্যের সহচার্য থেকে যখন একটি অপরটির দ্বারা দমিত হয় বা ক্রিয়া প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয় তখন সেই সম্পর্ককে অবদমনমূলক সম্পর্ক বলে। এরুপ অবদমন মূলত দমনকারী প্রজাতির দেহ থেকে নি:সৃত অজৈব রাসায়নিক পদার্খের দ্বারা সংঘটিত হয়। ফলে অবদমন প্রজাতি এবং দমনকারী প্রজাতির মধ্যে খাদ্য, আলো, বাসস্থান প্রভূতির জন্য প্রতিযোগিতা কমে যায়। Connell (1961) - এর পরীক্ষা থেকে দেখা যায় বর্ষাকালের দুটি প্রজাতি । যথা-
B. balanoides প্রজাতি তার বাসস্থান থেকে Chthiamah stellatus প্রজাতিকে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু সেক্ষেত্রে Chthiamah stellatus - এর কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না।
৪. প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক (Competition) : ঋনাত্মক এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে এক দুই বা ততোধিক প্রজাতি একে অপরকে আক্রমণপূর্বক ক্ষতি সাধন কারে অথবা অন্যকে বঞ্চিত করে তাদের প্রয়োজন মেটায় তখন সেই সম্পর্ককে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক বলে। এরুপ সম্পর্ক প্রধানত খাদ্য, পানি, সঙ্গী, বাসস্থান পাওয়ার জন্য সংগঠিত হয়।
আন্ত: প্রজাতিক( A ও B) সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা (0), উপকারিতা (+) এবং ক্ষতিকারক (-), ধরে নিম্নের ছকে উপর্যুক্ত সম্পর্কগুলোর প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপে বুঝানো হলো-
আন্ত: প্রজাতিক সম্পর্ক |
যখন প্রতিক্রিয়া হয় না |
যখন প্রতিক্রিয়া হয় |
ফলাফল |
(i)নিরপেক্ষ সম্পর্ক (Neutralism) |
০০ |
০০ |
কারো উপকার বা ক্ষতি হয় না |
(ii) পারস্পারিক জীবীতা (Mutualism) |
-
- |
++ |
উভয়ই উপকৃত হয় |
(iii) সহ-অবস্থানগত সম্পর্ক (Commensalism) |
- ০ |
+০ |
A এর জন্য আবশ্যক B এর কিছু হয় না। |
(iv) প্রটোকপারেশন (Protocooperation) |
- - |
++ |
সম্পর্ক না থাকলে দুই প্রজাতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সম্পর্ক থাকলে উভয় প্রজাতিই উপকৃত হয়। |
(v) পরজীবিতা (Parasitism) |
- ০ |
+ - |
একজন উপকৃত হলেও অপরজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
(vi) শিকারজনিত সম্পর্ক (Predation) |
০০ |
+ - |
একজন উপকৃত হলেও অপরজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
(vii) প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক (Competition) |
০০ |
+- |
একজন উপকৃত হলেও অপরজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
No comments