প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
উত্তর: পরিবেশের উপাদানগুলো পরস্পরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পর্কযুক্ত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি জটিল সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক জীবের তৎপরতার মধ্য দিয়ে পরিবেশে এই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবেশের কেবল একটি বিশেষ প্রজাতির বিলুপ্তি বিরাট বিপর্যায় ডেকে আনতে পারে। সে কারণে পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের যেসব জীব বা প্রাণীকে এক সময় অপ্রয়োজনীয় এবং অবাঞ্চিত মনে করা হতো, সময়ের বিবর্তনে দেখা গেছে সেগুলোই পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।এক সময় যুক্তরাষ্টের চেসাপিক উপকূলে ছিল অসংখ্য ঝিনুক। সেগুলো মাত্র তিন দিনে গোটা এলাকার পানি পরিশুদ্ধ করতে পারত।কিন্তু এখন সেই ঝিনুকের শতকরা ৯৯ ভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে । ফলে অবশিষ্ট ঝিনুকেরা এখন এক বছরেও ঐ পানি আর পরিশুদ্ধ করতে পারে না। এ কারণে ঐ উপকূলের পানি ক্রমশই কর্দমাক্ত হচ্ছে এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছেে। একটি পূর্ণ বয়স্ক ব্যাঙ একদিনে তার ওজনের সমপরিমাণ পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলতে পারে। এই পোকা-মাকড় আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ব্যাঙ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাখিদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে কীটপতঙ্গ। এর মধ্যে মানুষের এবং ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গেই বেশি। তাছাড়া পরাগায়নের ক্ষেত্রেও পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পেঁচা, ঈগল, চিল এবং বাজপাখিকে আমরা শিকারি প্রজাতি বলে জানি।এরা ইঁদুর খেয়ে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানুষের বসতবাড়িতে বসবাসকারী একজোড়া ইঁদুর বিনা বাধায় বংশ বিস্তার করলে বছর শেষে ইঁদুরের সংখ্যা দাড়াবে ৮৮০ টিতে । কিন্তু একটি পেচা দিনে কমপক্ষে তিনটি ইঁদুর খেয়ে হজম করতে পারে।শকুন, চিল এবং কাক প্রকৃতির জঞ্জাল সাফ না করলে রোগ জীবাণূতে পৃথিবী সয়লাব হয়ে যেত।
সে কারণে কোন জীবকেই অপ্রয়োজনীয় বলা যায় না । পরিবেশ থেকে কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হলে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
No comments