Header Ads

Header ADS

অধ্যায় : জীবের শ্রেণীবিন্যাস

 জীবের শ্রেণীবিন্যাস

আজ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রায় চার লক্ষ  এবং প্রাণীর প্রায় তের লক্ষ প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে। জানা বোঝাে   এবং শেখার সুবিধার জন্য এই অসংখ্য জীবকে সুষ্ঠভাবে বিন্যাস করা বা সাজানোর  প্রয়োজন। জীবজগতকে একটি স্বাভাবিক নিয়মে শ্রেণিবিন্যাস করার প্রয়োজনীয়তা অবশ্য অনেক আগে থেকেই প্রকৃতিবিদগণ অনুভব করেছিলেন। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে, যার নাম ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা।

শ্রেণীবিন্যাসের মূল লক্ষ্য একটাই। তা হচ্ছে এই বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় জীবজগৎকে সহজভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে জানা।


শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য

*প্রতিটি জীবের দল ও উপদল সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা।

* জীবজগতের ভিন্নতার দিকে আলোকপাত করে আহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা ।

*পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা এবং প্রতিটি জীবকে শনাক্ত করে তার নামকরণের ব্যবস্থা করা। 

*সর্বোপরি জীবজগৎ  এবং মানবকল্যাণে প্রয়োজনীয় জীবগুলোকে শনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণে সচেতন হওয়া।

সুইডিস প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস ১৭৩৫ সালে আপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমির অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি অসংখ্য নমুনা জীবের বৈশিষ্ট পর্যবেক্ষণ করে তিনি জীবজগৎকে দুটি ভাগে, যথা উদ্ভিদজগৎ  এবং প্রাণিজগৎ হিসেবে বিন্যস্ত করেন।

ক্যারোলাস লিনিয়াসের সময়কাল থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জীবজগৎকে উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণিজগৎ হিসেবে বিবেচনা করে দুটি রাজ্যে (Kingdom) শ্রেণিবিন্যাস করা হতো।

বিজ্ঞানের অগযাত্রায় বর্তমানে কোষের DNA এবং RNA -এর প্রকারভেদ, জীবদেহে কোষের বৈশিষ্ট্য, কোষের সংখ্যা ও খাদ্যাভ্যাসের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে আর. এইচ. হুইটেকার ( R. H. Whittaker) ১৯৬৯ সালে জীবজগৎকে পাঁচটি রাজ্য বা ফাইভ কিংডমে ( Five Kingdom) ভাগ করার প্রস্তাব করেন। পরবর্তীকারে মারগুলিস (Margulis) 1974 সালে Whittaker - এর শ্রেণিবিন্যাসের পরিবর্তিত ও বিস্তারিত রুপ দেন। তিনি সমস্ত জীবজগৎকে দুটি সুপার কিংডমে ভাগ করেন এবং পাঁচটি রাজ্যকে এই দুটি সুপার কিংডমের আওতাভুক্ত করেন।

জীবজগৎ   (a) সুপার কিংডম ১: প্রোক্যারিওটা (Prokaryotae): রাজ্য ১: মনেরা (Monera)

                    (b) সুপার কিংডম ২: ইউক্যারিওটা ( Eukaryota)

জীবজগৎ  (a) সুপার কিংডম ১: প্রোক্যারিওটা (Prokaryotae) : এরা আদিকোষ বিশিষ্ট এককোষী, আণুবীক্ষণিক জীব।

(i) রাজ্য ১: মনেরা (Monera) :

বৈশিষ্ট্য: 

এরা এককোষী, ফিলামেন্টাস,কলোনিয়াল। কোষে ক্রোমাটিন বস্তু থাকে কিন্তু নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা নেই। এদের প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি নেই, কিন্তু রাইবোজোম আছে। কোষ বিভাজন দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রধানত শোষন পদ্ধতিতে খাদ্যগ্রহণ করে। তবে কেউ কেউ ফটোসিনথেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করে।

উদাহরণ: নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া।

(b) সুপার কিংডম ২ : ইউক্যারিওটা ( Eukaryota) : এরা প্রকৃতকোষ বিশিষ্ট এককোষী বা বহুকোষী জীব। এরা এককভাবে অথবা কলোনি আকারে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে।

(i) রাজ্য-২: প্রোটিস্টা ( Protista)

বৈশিষ্ট্য: 

এরা এককোষী বা বহুকোষী, একক বা কলোনিয়াল ( দলবদ্ধ) বা ফিলামেন্টাস এবং সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট। কোষে ক্রোমাটিন বস্তু নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা পরিবৃত্ত থাকে। ক্রোমাটিন বস্তুতে DNA, RNA এবং প্রোটিন থাকে। কোষে সকল ধরনের অঙ্গাণূ থাকে। খাদ্যগ্রহণ শোষণ, গ্রহণ বা ফটোসিনথেটিক পদ্ধতিতে ঘটে। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটে এবং কনজুগেশনের মাধ্যমে অর্থাৎ জৈবনিকভাবে ভিন্ন কিন্তু গঠনগতভাবে এক, এরুপ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে। কোন ভ্রূন গঠিত হয় না।

উদাহরণ: অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম, এককোষী ও বহুকোষী শৈবাল।

রাজ্য-৩: ফানজাই বা ছত্রাক: অধিকাংশই স্থলজ। দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত।এদের দেহে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। এরা সাধারণত এককোষী বা বহুকোষী হয়। দেহে  ক্লোরোফিল নেই, তাই এরা পরভোজী । কোষ প্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত। হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে।

উদাহরণ- ইস্ট, পেনিসিলিয়াম ( Penicillium), মাশরুম ইত্যাদি।

রাজ্য-৪: প্লান্টি ( উদ্ভিদ জগৎ): এরা সাধারণত নিজেরা খাদ্য প্রস্তত করতে পারে তাই এরা স্বভোজী। এরা এক বা বহুকোষী হতে পারে। কোষপ্রাচীর সেলুলোজ  দ্বারা নির্মিত। এদের কোষ সুগঠিত নিউক্লিয়াসযুক্ত। উদ্ভিদে সবুজ কণিকা বা ক্লোরোফিল থাকে, তাই এগুলো খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে। প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোকসংশ্লেষনকারী উদ্ভিদ । এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। এদের ভ্রূণ সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে ডিপ্লয়েড পর্যায় শুরু হয়।

উদাহরণ: ফার্ণ,আম, জাম ইত্যাদি উন্নত সবুজ উদ্ভিদ।

রাজ্য-৫: Animalia (প্রাণিজগৎ): এরা নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বহুকোষী প্রাণী।এসব জীবের কোষে সেলূলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে না। সাধারণত  এ কোষগুলোতে প্লাস্টিডও থাকে না। তাই খাদ্যের জন্য এরা উদ্ভিদের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। খাদ্য গলধঃকরণ করে এবং দেহে জটিল টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। প্রধানত যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। পরিণত ডিপ্লয়েড পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীর জননাঙ্গ থেকে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেড উৎপন্ন হয়।

 উদাহরণ: মাছ, পাখি, গরু, মানুষ , প্রোটোজোয়া ব্যতীত সকল অমেরুদন্ডী এবং মেরুদন্ডী প্রাণী।

২০০৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস কেভলিয়ার-স্মিথ জীবজগতের প্রোটিস্টাকে প্রোটোজোয়া এবং ক্রোমিস্টা নামে দুটি ভাগে ভাগ করেন এবং মনেরাকে ব্যাকটেরিয়া রাজ্য হিসেবে পুনঃ নামকরণ করেন। এভাবে তিনি জীবজগৎকে মোট ছয়টি রাজ্যে ভাগ করেছেন।


নেস্টেড হায়ারর্কি ( nested hierarchy):

শ্রেনিবিন্যাসের প্রতিটি ধাপে তার আগের ধাপের বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হয়। যত উপরের ধাপ, তার অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা তত কম এবং অন্তর্ভুক্ত জীবের সংখ্যা তত বেশি । আবার যত নিচেরর ধাপ, তার অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা তত বেশিএবং অন্তর্ভুক্ত জীবের সংখ্যা তত কম।  একটি জীবকে প্রজাতি পর্যায়ে বিন্যাসে মূলত আন্তর্জাতিক কোড চিহ্নিত সাতটি ধাপ আছে।

রাজ্য ( Kingdom)

    পর্ব ( Phylum)

        শ্রেনি (Class)

            বর্গ ( Order)

                গোত্র ( Family )

                    গণ ( Genus)

                        প্রজাতি ( Species)

উপরের ধাপ যেন বড় একটা সেট আর তার নিচের ধাপ হলো তার উপসেট। রাজ্যের উপসেট হলো পর্ব, পর্বের উপসেট হলো শ্রেণি, শ্রেণির  উপসেট হলো বর্গ ইত্যাদি । শ্রেণিবিন্যাসের  এই পদ্ধতিকে বলে নেস্টেড হায়ারার্কি (  Nested Hierarchy) ।


মানুষের শ্রেণিবিন্যাস : 

রাজ্য ( Kingdom) : Animalia

    পর্ব ( Phylum) : Chordata

        শ্রেনি (Class) : Mammalia

            বর্গ ( Order) : Primate

                গোত্র ( Family ) : Hominidae

                    গণ ( Genus) : Homo

                        প্রজাতি ( Species) : Homo sapiens


কয়েকটি জীবের দ্বিপদ নামকরণ:

ধান:  Oryza sativa ( ওরাইজা সেটাইভা)

পাট: Corchorus capsularis ( কোরকোরাস  ক্যাপসুলারিস)

আম:  Mangifera indica ( ম্যাঙ্গিফিরা  ইন্ডিকা)

কাঠাল:  Artocarpus heterophyllus ( আরটোকারপাস হিটারোফাইলাস)

শাপলা:  Nymphaea nouchali ( নিমফিয়া নাওচালি)

জবা:  Hibiscus rosa-sinensis ( হিবিসকাস রোসা-সাইনেনসিস)

কলেরা জীবাণু: Vibrio cholerae ( ভিবরিও কলেরা)

ম্যালেরিয়া জীবাণু:  Plasmodium vivax (প্লাসমোডিয়াম ভাইভেক্স)

আরশোলা:  Periplaneta americana ( পেরিপ্লানিটা আমেরিকানা) 

মৌমাছি:  Apis indica

ইলিশ:  Tenualosa illisha

কুনোব্যাঙ :  Duttaphrynus melanostictus

দোয়েল:   Copsychus saularis

রয়েল বেঙ্গল টাইগার:  Panthera tigris

মানুষ:  Homo sapiens

No comments

Powered by Blogger.