রক্ত ( Blood) ও হৃদযন্ত্র (Heart)
রক্ত ( Blood) ও হৃদযন্ত্র (Heart)
১) রক্ত কি ?
রক্ত ( Blood): রক্ত একধরনের অস্বচ্ছ, অন্ত: কোষীয় লবণাক্ত এবং অনেকটা ক্ষারধর্মী তরল যোজক টিস্যু।
২) একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের শরীরে কত লিটার রক্ত থাকে?
উত্তর: ৫-৬ লিটার।
৩) রক্তের রং লাল কেন?
উত্তর: রক্ত রসে লাল রংয়ের হিমোগ্লোবিন নাম লৌহ-ঘটিত প্রোটিনের কারনে রক্তের রং লাল।
৪)রক্তের প্রধান উপাদানগুলো কি কি?
উত্তর: রক্তরস ( Plasma) ও রক্তকণিকা।
৫) রক্তে কত শতাংশ রক্তরস ও কত শতাংশ রক্ত কণিকা থাকে?
উত্তর: রক্তে ৫৫ % রক্তরস ও ৪৫% রক্তকণিকা থাকে।
৬) প্লাজমা কাকে বলে ?
উত্তর: রক্তের তরল অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে।
৭) রক্তরসের মধ্যে পানির পরিমাণ কত ?
উত্তর: রক্তরসের মধ্যে পানির পরিমাণ ৯০% এবং বাকী ১০% বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থ।
৮) রক্তরসের কাজ কি কি?
ক) রক্তকণিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত করা।
খ) টিস্যু থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করা।
গ) শ্বসনের ফলে নির্গত CO2 কে বাইকার্বনেট হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন করা।
ঘ) রক্তজমাট বাধার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিবহন করা।
ঙ) হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভূতি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করা।
চ) রক্তে অম্ল- ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৯) সিরাম কি?
উত্তর: রক্ত থেকে রক্তকণিকা ও রক্ত জমাট বাধার জন্য যে প্রোটিন আছে তা সরিয়ে নেয়ার পর যে তরলটি রয়ে যায় তাকে সিরাম বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, রক্ত জমাট বাধার পর হালকা হলুদ রঙের যে স্বচ্ছ রস পাওয়া যায় তাকে সিরাম বলে।
১০) রক্তরস ও সিরামের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: রক্তরস ও সিরামের মধ্যে পার্থক্য হলো রক্তরসে রক্তজমাট বাধার প্রোটিন থাকে কিন্তু সিরামে এ প্রোটিন থাকে না।
১১)রক্ত কণিকা কাকে বলে?
উত্তর: রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা বলে।
১২) রক্তকণিকা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: রক্তকণিকা তিন ধরনের। যথা:
ক) লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট।
খ) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট।
গ) অনুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট।
১৩) লোহিত রক্তকণিকা দেখতে কেমন?
উত্তর: লোহিত রক্তকণিকা দেখতে দ্বি-অবতল ও চাকতির মত।
১৪) লোহিত রক্তকণিকার আয়ু কতদিন?
উত্তর: লোহিত রক্তকণিকার আয়ু ১২০ দিন।
১৫) লোহিত রক্তকণিকা কোথায় সঞ্চিত থাকে ?
উত্তর: লোহিত রক্তকণিকা প্লিহায় ( Spleen) সঞ্চিত থাকে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে প্লিহা থেকে রক্তরসে সরবরাহ হয়।
১৬) মানুষের দেহে কোন সময়ে লোহিত কণিকার পরিমাণ বেশি থাকে?
উত্তর: ভ্রুনদেহে লোহিত কণিকার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে।
ভ্রুণদেহে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ ৮০-৯০ লক্ষ।
১৭) লোহিত রক্তকণিকার কাজ কি কি?
উত্তর: ক) দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
খ) নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইডকে টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করা।
গ) হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করা।
১৮) শ্বেত রক্তকণিকার আকার কোন ধরনের?
উত্তর: শ্বেত রক্তকণিকার নির্দিষ্ট কোন আকার নেই। হিমোগ্লোবিনবিহীন নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় কোষ।
১৯) শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু কত?
উত্তর: ১-১৫ দিন।
২০) শ্বেত রক্তকণিকার কি প্রক্রিয়ায় জীবাণূ ধ্বংস করে?
উত্তর: শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণূ ধ্বংস করে।
২১) মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কত?
উত্তর: ৪-১০ হাজার ।
২২) প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে শ্বেতরক্তকণিকার পরিমাণ কত থাকলে তাকে ব্লাড ক্যানসার বা লিউকোমিয়া বলে?
উত্তর: ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ।
২৩) শ্বেত রক্তকণিকা কত প্রকার কি কি?
উত্তর: গঠনগতভাবে এবং সাইটোপ্লাজমে দানার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে শ্বেত রক্তকণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- ক) অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন
খ) গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত ।
২৪) অ্যাগ্রানুলোসাইট শ্বেত রক্ত কণিকা কয় ধরনের?
উত্তর: দুই ধরনের । যথা: ক) লিম্ফোসাইট খ) মনোসাইট।
২৫) লিম্ফোসাইট কী ? এর কাজ কী ?
উত্তর: লিম্ফোসাইটগুলো বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট কণিকা।
লিম্ফোসাইট এন্টিবডি গঠন করে এবং এই এন্টিবডি দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করে।
২৬) মনোসাইট কী? এর কাজ কী ?
উত্তর: মনোসাইটগুলো ছোট নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় কণিকা।
মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণু ধ্বংস করে।
২৭) গ্রানুলোসাইট শ্বেত রক্তকণিকাগুলো নিউক্লিয়াসের আকারের উপর ভিত্তি করে কয়ভাগে বিভক্ত ?
উত্তর: নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল ও বেসোফিল।
২৮) নিউট্রোফিলের কাজ কী ?
উত্তর: নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে।
২৯) এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করে কোন কোন উপাদান ?
উত্তর: ইওসিনোফিল ও বেসোফিল হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নি:সৃত করে এলার্জি নিয়ন্ত্রন করে।
৩০) রক্তবাহিকার ভিতর রক্তকে জমাট বাধতে বাধা দেয় কোন কণিকা?
উত্তর: শ্বেতরক্তকণিকার দানাযুক্ত কণিকা বেসোফিল রক্তে হেপারিন নি:সৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকার ভিতর জমাট বাধতে বাধা দেয়।
৩০) রক্তের কোণ কণিকায় মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি প্রভূতি কোষীয় অঙ্গাণু থাকলেও নিউক্লিয়াস থাকে না?
উত্তর: অনুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট।
৩১) অনুচক্রিকার গড় আয়ু কতদিন ?
উত্তর : অনুচক্রিকার গড় আয়ু ৫-১০ দিন।
৩২) রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়াটি কি? রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া বর্ণণা কর।
উত্তর: যখন কোন রক্তবাহিকা বা টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অনুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। অনুচক্রিকাগুলো অনিয়মতকার ধারণ করে এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক পদার্থ তৈরী করে।এই পদার্থগুলো রক্তের প্রোটিন-প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে পরিণত করে। থ্রম্বিন পরবর্তীকালে রক্তের প্রোটিন-ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাধায় কিংবা রক্তের তঞ্চন ঘটায়।
ফাইব্রিন এক ধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা তৈরী করে। এটি ক্ষতস্থানে জমাট বাধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
তবে রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি আরও জটিল। এ প্রক্রিয়ার জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ভিটামিন কে ও ক্যালসিয়াম আয়ন জড়িত থাকে।
৩৩) রক্ত জমাট বাধতে যে প্রোটিন সাহায্য করে তার নাম কী ?
উত্তর: রক্তরসের এই প্রোটিনের নাম ফাইব্রিনোজেন যা ফাইব্রিন প্রোটিনে পরিণত হয়।
৩৪) রক্তের কাজ কী কী ?
উত্তর: রক্ত অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড , হরমোন, খাদ্যসার, রেচন বর্জ্য পরিবহণ করে এবং উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ করে।
৩৫) পলিসাইথেমিয়া কী?
উত্তর: রক্তে লোহিত রক্তকণিকার বৃদ্ধিকে পলিসাইথেমিয়া বলে।
৩৬) অ্যানিমিয়া কী?
উত্তর: রক্তের লোহিতকণিকায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে অ্যানিমিয়া বলে।
৩৭) থ্রম্বোসাইটোসিস কী?
উত্তর: রক্তে অনুচক্রিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে রক্ত জমাট বাধলে তাকে থ্রম্বোসাইটোসিস বলে।
৩৭) থ্যালাসেমিয়া কী?
উত্তর: এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। ৩ মাস পরপর রক্ত বদল করতে হয়।
৩৮) এন্টিজেন কী?
উত্তর: এন্টিজেন হলো বহিরাগত কোন বস্তু বা প্রোটিন যেটি আমাদের দেহে প্রবেশ করলে আমাদের শরীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটাকে ক্ষতিকর মনে করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
৩৯) এন্টিবডি কী?
উত্তর: অন্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের রক্ত যে পদার্থ তৈরী করে তাকে এন্টিবডি বলে।
৪০) Rh ফ্যাক্টর বলতে কী বুঝেন? Rh+ ও Rh- কী?
উত্তর: রেসাস বানরের রক্তে এক ধরনের এন্টিজেন রয়েছে যেটি অনেক মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় পাওয়া যায়। এই বানরের নাম অনুসারে একে Rhesus Factor বা সংক্ষেপে Rh ফ্যাক্টর বলে।
যাদের শরীরে এই এন্টিজেন পাওয়া যায় তাদেরকে Rh+ এবং যাদের শরীরে নেই তাদেরকে Rh- বলে।
মায়ের শরীরের রক্ত নেগেটিভ এবং বাবার রক্ত পজিটিভ হলে বাচ্চা জন্মের সময় জটিলতার সৃষ্টি হয়।
৪১) মায়োজেনিক ( Myogenic) হৃদপিন্ড কী? কার্ডিয়াক চক্র কী?
উত্তর: মানুষের হৃদপিন্ড বাইরের কোন উদ্দিপনা ছাড়াই হৃদপেশি নিজে থেকে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে। এ ধরনের হৃদপিন্ডকে মায়োজেনিক হৃদপিন্ড বলে।
একটি হৃদস্পন্দন হৃদপিন্ডে পরপর সংঘটিত হওয়ার ঘটনাকে কার্ডিয়াক চক্র বলে।
৪২) রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: হৃদপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সঞ্চালন হয়। চারটি ধাপে কার্ডিয়াক চক্রাকারে রক্ত সঞ্চালন ঘটে।
উর্ধ্ব মহাশিরা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে যায়।
পালমোনারি শিরার মধ্যদিয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে।
৪৩) ট্রাইকাসপিড কপাটিকা কোথায় থাকে?
উত্তর: ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মাঝে ট্রাইকাসপিড ভালব বা কপাটিকা থাকে। এটি কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত পরিবহন করে।
৪৪) বাইকাসপিড কপাটিকা কোথায় থাকে?
উত্তর: বাইকাসপিড কপাটিকা বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মাঝে থাকে। এটি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পরিবহন করে।
No comments