Thursday, March 10, 2022

ধর্মীয় বিশ্বাস ‍ও বিবর্তন

 ধর্মীয় বিশ্বাস ‍ও বিবর্তন

 

সংক্ষিপ্তভাবে বললে ইসলাম  হলো নিজেকে আল্লাহর পথে সমর্পন করে, এক আল্লাহ ও তার প্রেরিত নবীদের দেখানো পথ ধরে শান্তি পথ খোঁজ করা।

আর বিবর্তন একটি বৈজ্ঞানিক মতবাদ । বিজ্ঞান এ পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া প্রকৃতির ঘটনাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধমে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বিশেষ জ্ঞানটুকু খুজে বের করে ।

বিজ্ঞান ও ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের মধ্যে কি, কোন বিরোধ আছে?

যদিও বর্তমানে বিজ্ঞান ও ধর্মকে পরস্পর বিরোধী বলে ব্যাখ্যা করা হয়, কিন্তু বিজ্ঞানে যা সত্য প্রমাণিত তাতে বিরোধের কিছু নেই।  তবে বিজ্ঞানের কিছু বিষয় যেমন বিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া যার প্রমাণিত সত্যটুকু বিশ্বাস করলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিশ্বাস করা হবে বলে আমি মনে করি না। কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষন করা যেতে পারে । বিজ্ঞান হোক বা ধর্ম কোন বিষয়ে অন্ধ বিশ্বাস মানুষের চিন্তাশক্তিকে সংকুচিত করে, ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

আজকাল যারা বিজ্ঞানের ছাত্র  এবং যারা বিবর্তন সম্পর্কে শুনেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই দু:চিন্তাগ্রস্ত হন এই ভেবে যে, বিবর্তন সত্য মনে করলে বুঝি সবাইকে নাস্তিক হতে হবে।

এজন্য অনেকেই চান কমফোর্ট জোন, যেখানে ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেও কিভাবে  বিবর্তন বিষয়ে পড়া যায় এ সম্পর্কে সাজেশন চান। আমি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব । আশা করি আমাকে সহযোগিতা করবেন আপনার মূল্যবান পরামর্শ ও সমালোচনা দ্বারা।

নবম দশম শ্রেণীর দ্বাদশ অধ্যায়ে জীবের বংশগতি ও বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

বিবর্তন ও ধর্মের যে বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা চলে তা হলো-

ক) জীবের উৎপত্তি নিয়ে বিশেষ করে মানুষের উৎপত্তি বিষয়ে ।

খ) নিজে নিজে কোন প্রজাতির উৎপত্তি বিষয়ে।

এ পৃথিবীতে  জীবের  উৎপত্তি হয়েছে, বিবর্তন প্রক্রিয়ায় । সৃষ্টিকর্তা তা সৃষ্টি করেছেন। 

আর মানুষের উৎপত্তি বিষয়ে বলি। মানুষের উৎপত্তি যে বানর থেকে হয়েছে সেটা বর্তমান বিজ্ঞানও স্বীকার করে না । ধারণা করা হয় শিপাঞ্জি বা বনমানুষের কোন পূর্বপুরুষ থেকে মানুষের উদ্ভব হতে পারে। কাজেই এই একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে, বিবতর্ন বিষয়ে অনাগ্রহ সৃষ্টি মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। আর বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা দোষের কিছু না।

নবম দশম শ্রেণীর  জীবের বংশগতি ও বিবর্তন  অধ্যায় থেকে বিবর্তন সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরছি : এক সময় বলা হতো যে, ধীর অবিরাম এবং চলমান পরিবর্তন দিয়ে কোন সরলতম নিম্ন শ্রেণীর জীব থেকে জটিল এবং উন্নততর নতুন প্রজাতির বা জীবের উদ্ভব ঘটে তাকে বিবর্তন বলে । তবে বিবর্তন সবসময় ধীর গতিতে ঘটে না। পরিবেশের কারণে অনেক সময় দ্রুত গতিতে ঘটতে দেখা গেছে । অর্থাৎ জীব সরল গঠন থেকে যেমন জটিল গঠনে পরিবর্তিত হতে পারে  তেমনি জটিল গঠন থেকে সরল গঠনের জীবেও বিবর্তিত হতে পারে।”

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিবর্তন অর্থ মূলত সময়ে পরিবর্তনের সাথে জীবদেহের মধ্যে পরিবর্তন সাধন। আসলে আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের জন্য ‍উত্তপ্ত গ্যাসীয় খন্ড থেকে ধীরে ধীরে মানুষের বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরী করেছেন। এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এবং জীবকূল যাতে পরিবেশে টিকে থাকতে পারে তার জন্য যে প্রক্রিয়া, তাই মূলত বিবর্তন প্রক্রিয়া। আর পরিবেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এখনও জীবকূল বিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তন না হলে, জীব পরিবর্তিত পৃথিবীতে টিকতে পারবে না। ধ্বংস হয়ে যাবে । সেই সাথে মানুষের বসবাস উপযোগী পরিবেশ দূষিত হয়ে যাবে। মানুষ এ পৃথিবীতে বিলু্প্ত হয়ে যাবে।

আসলে জীব সৃষ্টির ঘটনা কোথাও বলা নেই যে, আল্লাহ সব জীব একসাথে সৃষ্টি করেছেন। তাই জীবের বিবর্তনের সাথে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কোন বৈরিতা দেখি না।


পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় কিভাবে মুসলিম জাতি টিকে থাকবে তার জন্য ইজমা, কিয়াস এর প্রচলন করা হয়েছে।

আদি পিতা হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (স:) পর্যন্ত অসংখ্য নবী রাসুল এসেছেন। তাদের সেসময়কার জীবন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে সহীফা, কিতাব নাযিল করা হয়েছে।

সর্বশেষ আধুনিক মানুষের জন্য আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআন। তাই জীবনধারা সাথে ধর্মীয় রীতির পরিবর্তন বিষয়টি সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।

এ লেখাটি মূলত যারা বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং যারা বিবর্তন বিষয় নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য। আশা করি একটু হলেও মনে শান্তি দিবে। 

বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতি উৎপত্তির ক্ষেত্রে প্রজাতির সংজ্ঞা একটি ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

উইকিপিডিয়া থেকে প্রজাতির সম্পর্কে বলা হয়েছে:  “ সমগুণসম্পন্ন ও সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবকুলকে একেকটি প্রজাতি বলে।

প্রজাতি জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত একটি শব্দ; ''প্রজাতি হলো এমন এক জীবগোষ্ঠী যারা নিজেদের মধ্যে যৌন মিলনে এবং উর্বর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কিন্ত অনুরুপ দৈহিক গঠন বিশিষ্ট নিকটতম জীবগোষ্ঠী হতে সম্পূর্ণ আলাদা''। যেটি ভাষায় বলতে বুঝায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সর্বাধিক মিলসম্পন্ন একদল জীব, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম। এটি জৈব-শ্রেণীবিন্যাস ও শ্রেণীবিন্যাস-ক্রমের অন্যতম একক। সাধারণভাবে প্রজাতি বলতে কয়েকটি অর্গানিজমের সমষ্টি বুঝায়। সাধারণত ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবেরা প্রজননের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে থাকে। প্রজাতি বলতে আরও বোঝায় যা শ্রেনীবিন্যাসবিদ্যার(t a x o n o m y)একটি ধাপ যা গণের নিচে অবস্থিত ও শ্রেণীবিন্যাস এর সবচেয়ে নিচের ধাপ। প্রজাপতির কতগুলো বৈশিষ্ট্য নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

ক. প্রতিটি প্রজাতি আপন বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র।

খ. প্রজাতির সদস্যরা পরস্পরের মধ্যে জিন বিনিময়ে সক্ষম।”


প্রকৃতিতে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় কোন নতুন প্রজাতি সৃষ্টি সহজ নয়। উদাহরণসরূপ,  পুরুষ সিংহ এবং স্ত্রী বাঘের মিলনের ফলে লাইগার (Liger) নামক প্রাণীর জন্ম হয়। এছাড়া পুরুষ বাঘ এবং স্ত্রী  সিংহের মিলনে টাইগন (Tigon) নামক প্রাণীর জন্ম হয়। । কিন্তু  সেই প্রাণী বংশবৃদ্ধিতে সক্ষম হয় না। তাই তাদের বংশধারার বিলুপ্তি ঘটে এবং বিবর্তন ঘটে না।



বিবর্তন আসলে দুই ধরনে হয়ে থাকে। একটি হলো মাইক্রো বা ছোট বিবর্তন এবং অপরটি ম্যাক্রো বা বড় বিবর্তন।

মাইক্রো বিবর্তন:  কোন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে পরিবেশের সাথে খাপ-খাওয়ানোর জন্য
তথা পরিবেশে টিকে থাকার জন্য জীবের ক্রোমোজোমের মধ্যে অবস্থিত ডিএনএ (DNA) এর মধ্যে মিউটেশনের মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন । এটাকে মাইক্রো বিবর্তন বলে।  এ ধরনের পরিবর্তনের বা বিবর্তনের ফলে, একই প্রজাতির জীবদের মধ্যে মিউটশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। এ ফলে অনেক সময় পরিবর্তন প্রাপ্ত জীবসমূহ অনুকূল বৈশিষ্ট্য লাভ করে প্রজাতি সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আর অনুকূল পরিবেশ  না পেলে  বিলুপ্ত হয়ে যায়। মাইক্রো বিবর্তনের মাধ্যমে কোন নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় না । এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিকট সম্পর্কযুক্ত উপপ্রজাতির সৃষ্টি হয়।


ম্যাক্রো বিবর্তন :  ম্যাক্রো বিবর্তন হলো কোন প্রজাতির কোন এক সদস্যের ডিএনএ (DNA) বা জিনের মধ্যে মিউটেশনের ফলে উপপ্রজাতি থেকে ভিন্নতর এমন এক প্রজাতির উদ্ভব  হয় যা অনূকূল পরিবেশ পেলে টিকে যায় নতুনবা বিলুপ্ত হয়। এক্ষেত্রে পূর্বপুরুষ থেকে এ ধরনের প্রজাতির বৈশিষ্টের পার্থক্য অনেক বেশি থাকে।

এই ম্যাক্রো বা বড় বিবর্তনকেই ধর্মে সাথে অনেকেই সংঘর্ষিক বলে মনে করেন।

বিবর্তনে প্রাপ্ত ফসিল বা জীবাশ্মগুলো অনেক বিলুপ্ত ও অজানা প্রাণী সম্পর্কে ধারণা দেয় । তবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে এসব প্রাণীকে যারা ম্যাক্রো বিবর্তনের চিরন্তন উদাহরণ হিসেবে গণ্য করেন তাদের সাথে আমি একমত পোষন করি না।

বিবর্তন আসলে কি ধরনের জ্ঞান প্রদান করে সে বিষয়ে ধরণা রাখা দরকার। যেসব বিষয়ে বিবর্তন জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তা হলো:

ক) অকোষীয় থেকে কোষীয়, সরল থেকে জটিল গঠনযুক্ত প্রাণীকূল সম্পর্কে ধারণা দেয।

খ) জীবকূল পরিবর্তিত পরিবেশে কিভাবে টিকে থাকে তা ব্যাখ্যা করে।

গ) টিকে থাকার মত পরিবেশের নিয়মগুলোকে বুঝতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা এ পৃথিবীতে  ঘটে যাওয়া না ঘটনা কিভাবে ঘটে তা জানার চেষ্টা করছে যুগ যুগ ধরে। আর এ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা আবিষ্কার। একটি পরমাণুর ভিতর রয়েছে ইলেক্ট্রন, নিউট্রন  ও প্রোটোন কণা। তেমনি জীবের প্রতিটি কোষ অসংখ্য পরমাণু সমন্বয়ে গঠিত। আর এ জীবকোষের ভিতরের পরমাণুও ইলেক্ট্রন, নিউট্রন ও প্রোটোন কনার সমন্বয়ে গঠিত।

প্রতিটি জীবকোষ যে মাটির বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত তা এর মাধ্যমে প্রমাণিত। 

কোন বিষয়ে মতের অমিল থাকলে যারা জানেন তারা আশা করি কমেন্ট করে যাবেন।

লেখাটির কাজ চলছে.......



 


No comments:

Post a Comment