জীবজগতের ৫ টি রাজ্যের মধ্যে মনেরা, প্রোটিস্টা ও ফানজাই এই ৩টি রাজ্য মিলে অনুজীবজগৎ।
নিউক্লিয়াসের গঠনের উপর ভিত্তি করে অনুজীবগতকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১। এক্যারিওটা ২। প্রোক্যারিওটা ৩। ইউক্যারিওটা
এক্যারিওটা বা অকোষীয়: এসব অনুজীব এতই ছোট যে তা সাধারণ আলোক অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচেও দেখা যায় না। এদের দেখতে ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, যেমন- ভাইরাস।
প্রোক্যারিওটা বা আদিকোষী: যেসব অনুজীবদের কোষের কেন্দ্রিকা সুগঠিত নয় তারাই এ রাজ্যের সদস্য। সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকায় এদের কোষকে আদিকোষ বলা হয়।যথা: ব্যাকটেরিয়া্।
ইউক্যারিওটা বা প্রকৃতকোষী : যেসব অনুজীব কোষের কেন্দ্রিকা সুগঠিত তাদেরই প্রকৃত কোষ বলে।শৈবাল, ছত্রাক ও প্রোটোজোয়া এ ধরনের অনুজীব।
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া
ভাইরাস: ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসদেরকে দেখা যায় না । এরা সরলতম জীব। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, প্লাজমালেমা, সুগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছেই নেই। তাই ভাইরাসের দেহকে অকোষীয় বলা হয়।
এরা শুধুমাত্র প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক এসিড ( ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত।
এদের আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক এসিড বের হয়ে গেলে এরা জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবদেহে যেইমাত্র প্রোটিন আবরণ ও নিউক্লিক এসিডকে একত্র করা হয়, তখনি এরা জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এরা জীবনের কোন লক্ষণ দেখায় না।এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবী।
ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস: ভাইরাসের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ একটি পরিচিত ভাইরাস।
ভাইরাস গোলাকার, দন্ডাকার, ব্যাঙ্গাচি ও পাউরুটির ন্যায় হতে পারে । ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। ধানের টুংরো ও তামাকের মোজাইক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়।
ব্যাকটেরিয়া: ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অনুবীক্ষণিক জীব।
বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্ব প্রথম ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার,দন্ডাকার, কমা আকার, প্যাচানো ইত্যাদি নানা ধরনের হতে পারে।
কক্কাস: গোলাকার আকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে কক্কাস ব্যাকটেরিয়া বলে। যেমন : নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।
ব্যাসিলাস : এরা দন্ডের ন্যায় ব্যাকটেরিয়া। ধনুষ্টংকার, রক্তামাশয় ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া্।
কমা: কলেরা রোগ সৃষ্টিকারী কমা ব্যাকটেরিয়া।
স্পাইরিলাম: প্যাচানো আকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে স্পাইরিলাম ব্যাকটেরিয়া বলে।
ছত্রাক: ছত্রাক সমাঙ্গদেহী ক্লোরোফিলবিহীন অসবুজ উদ্ভিদ। এরা পরভোজী অথবা মৃতভোজী।
পরভোজী ছত্রাক বাসি ও পচা খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল, শাকসবজি, ভেঁজা রুটি বা চমড়া, গোবর ইত্যাদিতে জন্মায়। মৃতভোজী ছত্রাক মৃত জীবদেহ বা জৈব পদার্থ পূর্ণ মাটিতে জন্মায়।
অ্যামিবা: প্রোটিস্টা রাজ্যের সদস্য অ্যামিবা এককোষী প্রাণী। এদের দেহ ক্ষুদ্রাকার। অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা যায় না। এরা প্রয়োজনে দেহের আকার পরিবর্তন করে থাকে। এদের দেহ থেকে আঙ্গুলের মতো তৈরি অভিক্ষেপকে ক্ষণপদ বলে। এর সাহায্যে অ্যামিবা খাদ্যগ্রহণ ও চলাচল করে।এদের দেহে পানিগহ্বর, খাদ্যগহ্বর ও সংকোচন গহ্বর থাকে। এদের সারাদেহ একটি পাতলা ও স্বচ্ছ পর্দা দ্বারা ঘেরা থাকে । একে প্লাজমালেমা বলা হয়। অ্যামিবা পানিতে, স্যাতস্যাতে মাটিতে, পুকুরের তলার পচা জৈব আবর্জনার মধ্যে জন্মে।
এন্টামিবা: এন্টামিবা প্রোটিস্টা রাজ্যভুক্ত আরেক ধরনের এককোষী জীব ।
সিস্ট: এরাও এমিবার মত আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে। এদের দেহ স্বচ্ছ জেলীর ন্যায় । তবে কখনো কখনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা গোলাকার শক্ত আবরণে নিজেদের দেহ ঢেকে ফেলে। এ অবস্থায় একে সিস্ট বলে।
আমাশয় রোগ সাধারণত দুই ধরনের, যথা- এমিবিক ও ব্যাসিলারি।ব্যাসিলাস আমাশয়ের কারণ এক ধরনের ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া।
এন্টিমিবা নামক এক ধরনের এককোষী প্রাণীর আক্রমণে এমিবিক আমাশয় হয়ে থাকে।
এরা পরজীবী হিসেবে মানুষ, বানর জাতীয় প্রাণী, বিড়াল, কুকুর, শূকর ও ইদুরের বৃহদন্ত্রে বাস করে।
এন্টামিবা কোষ বিভাজন ও অনুবীজ সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
স্পোরুলেশন পদ্ধতিতে একটি কোষের প্রোটোপ্লাজম বহুখন্ডে বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণূবীজ বা স্পোর গঠন করে। অনুকুল পরিবেশে এরা প্রত্যেকে একটি অ্যামিবা হিসেবে বড় হয়্। এন্টামিবা এক ধরনের আমাশয় রোগের জন্য দায়ী।
No comments:
Post a Comment