আলেকজেন্ডার গ্রাহাম বেল ( Alexander Graham Bell)
শিশুকাল থেকেই তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতুহলি ছিলেন। তিনি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ এবং ঘূর্ণায়মান প্যাডেলের সমন্বয়ে একটি গম পেষানোর যন্ত্র তৈরী করেন।
এক তরুণ। বয়স আর কত হবে । বড়জোর ষোল বছর। অথচ এতো অল্প বয়সেই বোস্টন শহরে এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাজ করতে হতো। আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন সবেমাত্র টেলিগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। মানুষ এক জয়গার তথ্য সহজেই এই যন্ত্রের সাহায্যে পাঠাতে পারছে দূরের কোনো জায়গায়। কিন্তু তা হলে কি হবে, মানুষ তো। মানুষ একবার কোন কিছু পেলেই থেমে থাকে না, তার অনুসন্ধানী মন আরও নতুন কিছু পেতে চায়। এক্ষেত্রে ঘটলো তাই। মানুষ টেলিগ্রাফের মাধ্যমে শুধু সংকেত দিয়ে খবরাখবর পাঠিয়ে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। মানুষ চাইলো, নিজের কন্ঠকে প্রিয়জনের কাছে পাঠাতে । এত যে কথা বলবে সে যেমন খুশি হবে, ঠিক তেমনি যার কাছে পাঠানো হবে , সেও তেমনি খুশি হবে। বিজ্ঞানীরা মানুষের এই আগ্রহের কথা কিন্তু জানেন। তাই শুরু হয়ে গেল গবেষণা। এক একজন লোক এক এক দিক নিয়ে কাজ করতে শুরু করলো।
আমি যে তরুণ গৃহশিক্ষকের কথা বলছি, তার ছিল বিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ। তিনিও বিজ্ঞানের আবিষ্কার সম্পর্কে বেশ খবরাখবর রাখতেন। টেলিগ্রাফের কথাও তিনি ভালোকরেই জানতেন। কিন্তু তার মন চাইলো মানুষের কন্ঠ দূরে কোথাও পাঠাতে।
প্রতিদিন ছাত্রের বাড়ি যায়, ছাত্রকে পড়িয়ে আবার বাসায় ফিরে আসে। পড়াতে যাওয়ার সময় তার মাথায় চিন্তা, বাড়ি ফেরার সময়ও তার মাথায় একই চিন্তা। কিভাবে যন্ত্র দিয়ে মানুষের কথা টেলিগ্রাফের মতো অনেক দূরে পাঠানো যায়। শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ছাত্রের বাবার কাছে সব কথা খুলে বললেন। তাকে অনুরোধ করলেন তাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারেন কি না?
ব্যবসায়ী হলেও ছাত্রের বাবার মন বেশ ভালো ছিল। তরুণ গৃহশিক্ষককে তিনি বেশ পছন্দ করতেন। সব কথা শুনে তিনি শিক্ষককে একেবারে না বলতে পারলেন না। বিনাভাড়ায় নিচের তলায় একটা ঘর দিলেন, সেই সঙ্গে কিছু টাকাকড়িও । তরুণটি এবার হাতে স্বর্গ পেলেন যেন। বাজার থেকে কিনে আনলেন বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, লোহা ও তামার পাত, নানা ধরনের তার, পেরেক ইত্যাদি হরেক রকমের জিনিস। ভদ্রলোকের দেওয়া টাকা তো নিঃশেষ হলোই, অধিকিন্তু নিজের যা ছিল সম্বল তা-ও ফুরিয়ে গেল।
দিন যায়। তরুণের গবেষণায় এতটুকুও ছেদ পড়ে না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল তবুও গবেষণায় বিরাম নেই । উৎসাহে এতটুকু ভাটা পড়ে না। হয়তো খেয়ালও ছিল না তাঁর । খেয়াল হলো সেদিন- যেদিন ঘরের মালিক বললেন ঘর ছেড়ে দিতে।
তরুণটি এবার দিশেহারা হয়ে উঠলেন। সত্যিই তো, কয়েক বছর গত হয়ে গেছে। এতকাল ভদ্রলোকের ঘরের প্রয়োজন ছিল না, আজ তার দরকার হয়েছে। ঘর তাকে ছাড়তেই হবে। কিন্তু কী করবেন তিনি?
তরুণটির কাছে তখন কানাকড়িও অবশিষ্ট নেই। একমাত্র মনের জোরকে সম্বল করে বোস্টন শহরে একটি ঘর ভাড়া করে উঠলেন। সৌভাগ্যক্রমে দেখা পেলেন এক গবেষণা- পাগল বন্ধুর। প্রচুর টাকা পয়সার মালিকও ছিলেন বন্ধুটি।
দুই তরুণ পুনরায় নিমগ্ন হলেন গবেষণায়। একদিন একটি লম্বা তারের দু’ প্রান্তে পাতলা লোহার পাতকে ভালভাবে বেধে, তার উপর তামার তার জড়ালেন । দুই প্রান্তে থাকলেন দুই তরুন কথা বললেন এবং অপরে শুনলেন। দেখা গেল শব্দটা বড্ড ক্ষীণ। ব্যাপারটা মনঃপুত না হলেও উৎসাহ লাভ করলেন। নিশ্চিত হলেন, মানুষের কন্ঠস্বরকেও দূরে প্রেরণ করা সম্ভব হবে।
কতদিন পর সার্থক হলো তাদের গবেষণা। আবিষ্কৃত হলো টেলিফোন। এই টেলিফোনে পরীক্ষামূলক প্রথম বার্তা বিনিময় করেছিলেন সেই দুই তরুণ। একটি বাড়ির উপরতলা ও নিচের তলা থেকে। অধ্যবসায়ী সেই তরুণটির নাম আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।
পরবর্তীকালে তিনি পদার্থবিদ হিসেবে অনেক সুনাম অর্জন করেন।
আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল তার টেলিফোন প্যাটেন্ট করেন ১৮৭৬ সালে। এই মহান বিজ্ঞানীদের স্মরণ করে রাখার জন্য মানুষও অনেক কিছু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারই সম্মানে বেল ল্যাবরেটরি নামে একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেছে । এখানে বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এই গবেষণাগারের অনেক বিজ্ঞানীই নানা সময় নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। এই বেল ল্যাবরেটরী থেকেই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয় এবং উন্মুক্ত সোর্স অপারেটিং সফটওয়্যার এখান থেকেই আবিষ্কার হয়।
No comments:
Post a Comment