Friday, May 28, 2021

অধ্যায়-২ : তাপমাত্রা

            চলো পদার্থ বিজ্ঞান শিখি -২

              অধ্যায়-২ : তাপমাত্রা


 আঠারো শতকের শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়।পানিকে তাপ দিলে পানি বাষ্পে পরিণিত হয়। আর এই বাষ্পকে কাজে লাগিয়ে সে সময় বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করা হয়।এই বাষ্পিয় ইঞ্জিন থেকেই পরবর্তীতে ডিজেল ইঞ্জিন তৈরী করা হয়। যা পরিবহন ও কল-কারখানায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

 তাপ

তাপ হচ্ছে একপ্রকার শক্তি । তাপ কোন বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়।

তাপমাত্রা

 কোন দিন আমরা ঠান্ডা আবার কোন দিন আমরা গরম অনুভব করি। বাতাস কতটুকু গরম বা ঠান্ডা সেই অবস্থাই হচ্ছে তাপমাত্রা।

 তাপশক্তির সঞ্চালন

 শক্তি বিভিন্ন উপায়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়। তাপ সঞ্চালন উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে তাপের প্রবাহ হলো তাপ সঞ্চালন। তাপ পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ এই তিন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়।

 পরিবহন পদ্ধতি

 একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে স্টিল বা অ্যালুমিনায়ামের চামচ দিয়ে নড়াচাড়া করলে চামটি গরম হয়ে যায়। গরম পানি থেকে তাপ পরিবাহিত হয়ে হাতের কাছে চলে আসে। লোহা, তামা, এলুমিনিয়াম ধাতু পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ পরিবহন করে। আর কাঠ, কাপড় প্রভূতি জৈব পদার্থ অধাতু হ‌ওয়ায় এর পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ পরিবহন করলেও পরিমাণে খুবই কম তাপ পরিবহন করে। তাই রান্নার সময় নাড়ানি হিসেবে কাঠের নাড়ানি ব্যবহার সুবিধাজনক। পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী, অপরিবাহী বিদ্যুৎ হলো ইলেকট্রনের প্রবাহ। মে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রন পরিবাহিত হয় তাদেরকে পরিবাহী বলে। ধাতু বা ধাতব বা পদার্থগুলো পরিবাহী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অধাতুগুলো বেশিরভাগই অপরিবাহী পদার্থ।তবে গ্রাফাইট বা পেন্সিলের শিশ অধাতু হলেও বিদ্যুৎ পরিবহন করে। পেন্সিলে,ব্যাটারীতে গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিক গ্লাস রাবার বিদ্যুৎ পরিবহন করে না তাই এরা অপরিবাহী পদার্থ। সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম । এই পদার্থগুলো নিম্ন তাপমাত্রায় খুব কম বিদ্যুৎ পরিবহন করে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চল বিদ্যুৎ যে বিদ্যুৎ এক পদার্থ থেকে অন্য পদার্থের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হয় তাই চলবিদ্যুত । দুটি পদার্থ ঘর্ষণের ফলে সামান্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।এমন দুটি হাত একত্রে ঘষলেও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ বজায় রাখার জন্য উৎস থেকে অবিরাম ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়।


 পরিচলন পদ্ধতি

 পানিকে গরম করলে পানির নিচের অংশ উপরে উঠে আসে এবং উপরের অংশ নিচে চলে যায়। একজন তাপ নিয়ে চলে এসে আরেকজনকে জায়গা করে দেয়।এই পদ্ধতি হলো পরিচলন পদ্ধতি। বায়বীয় পদার্থ‌ও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ ছড়িয়ে দেয়। শীতকালে আগুন পোহাবার সময় দেখা যায় আগুনের উপরের দিকে বেশি গরম থাকে । এক্ষেত্রে আগুনের কাছের বাতাস উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায়।এ কারণে এমন ঘটে। বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ তরঙ্গাকারে সঞ্চালিত হয়। 

বিকিরণ পদ্ধতি 

 যে পদ্ধতিতে তাপ আলোর সাহায্যে বিকিরিত হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় সেই পদ্ধতি হলো বিকিরণ পদ্ধতি। সূ্র্যের আলো বিকিরণ পদ্ধতি তাপ আমাদের কাছে নিয়ে আসে। 

 

বস্তুর উপর তাপের প্রভাব  

কোন বস্তু উপর তাপ প্রয়োগ করলে তার প্রসারণ ঘটে। কঠিন পদার্থের চেয়ে তরল পদার্থের প্রসারণ বেশি।তরল পদার্থের চেয়ে গ্যাসীয় পদার্থের প্রসারণ আরও বেশি। যদি কখনো বোতলের মুখ খুলতে অসুবিধা হয় তাহলে মুখটিতে হালকা তাপ দিলে সহজেই খুলে যায়। রেললাইনের পাতাগুলো সামান্য ফাঁক রেখে জোড়া দেওয়া হয় যাতে রেললাইন চলার সময় ঘর্ষণজনিত তাপে তা বেঁকে না যায়।

 আদ্রর্তা ও বায়ু চাপের উপর তাপমাত্রার প্রভাব

 বায়ু ছোটাছুটি করে।বাধা পেলে বল প্রয়োগ করে। বায়ু একক ক্ষেত্রফলের উপর যে বলপ্রয়োগ করে তাকে বায়ুচাপ বলে। বায়ু সব দিকে চাপ দেয়। কোন স্থানের বায়ুচাপ নির্ভর করে সেখানকার তাপমাত্রার উপর। তাপমাত্রা বাড়লে কোন বদ্ধ পাত্রে বায়ুচাপ বেড়ে যায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুচাপ কমে যায়। এর কারণ বায়ুমণ্ডল কোন বদ্ধ পাত্র নয় ।এটি খোলা। তাপ পেলে বায়ু হালকা হয়ে উপর দিকে উঠে যায়। তাই কোন কোন স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বায়ুচাপ কমে যায়। অর্থাৎ নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। জলীয় বাষ্প, আদ্রর্তা, তাপমাত্রা, বৃষ্টি ভূ- পৃষ্ঠের পানি বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে। বায়ুতে সবসময়ই এভাবে কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে।

আদ্রর্তা

 বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাকে আদ্রর্তা বলা হয়। বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকলে বলা হয় আদ্রর্তা কম। বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি হলে বলা হয় আদ্রর্তা বেশি। তাপমাত্রা বাড়লে বেশি পরিমাণ পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। আবার তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই গরমকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে ঘামে হয়। আবার বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে এক সময় তা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়।এই কারণে গরমকালে বেশি বৃষ্টি হয়।


 উচ্চ চাপ নিম্ন চাপ

 দিনের বেলায় সূর্যের আলোর তাপে বায়ু উপর দিকে উঠে যায়। ফলে সেখানে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়। আশপাশের বাতাস সেই ফাকা জায়গা পূরণের জন্য ছুটে আসে। ফলে ঘুর্ণেঝড়ের সৃষ্টি হয়। আদ্রর্তা আগুনে পুড়ে যাওয়া অস্ত্র তৈরি আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো অস্ত্র তৈরি।বোমা,রাইফেল,ট্যাংক।

 গলনাঙ্ক

 যে তাপমাত্রায় কোন কঠিন পদার্থ গলে তরল পদার্থে পরিণত হয় তাকে ঐ তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।

 স্ফুটনাঙ্ক

 যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থ ফুটতে আরম্ভ করে তাকে ঐ পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।

No comments:

Post a Comment